শাকিরার কঠিন দিনের সমাপ্তি

২০১৭ সালের নভেম্বরে অতিরিক্ত সংগীতচর্চার কারণে তাঁর গলায় রক্তক্ষরণ হয় এবং কণ্ঠের জটিল সমস্যা ধরা পরে। ডাক্তার শাকিরাকে কথা বলা বন্ধ করার পরামর্শ দেন। ডাক্তার তখন বলেছেন, ‘কণ্ঠের ওপর কোনো চাপ দেওয়া যাবে না।তখন শাকিরা দেখলেন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। ডাক্তার জানান, ‘আর কখনো কথা বলতে পারবেন না, এমনও হতে পারে।’ সেই সব খারাপ দিন পার করে ‘এল ডোরাডো ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ শেষ করেছেন শাকিরা। ২২টি দেশের সেই ওয়ার্ল্ড ট্যুরের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র মুক্তি পেয়েছে গতকাল বুধবার।

দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উঠে আসে সেই সব দিনের কথা। শাকিরা বলেন, ‘আমি জানতাম, আমার তারুণ্য, আমার সৌন্দর্য সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যাবে। আমি সে জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু কণ্ঠ হারিয়ে যাবে, সেটা কল্পনাও করিনি।’

শাকিরা আরও জানান, কণ্ঠ তাঁর অস্তিত্ব। কণ্ঠ ছাড়া তাঁর বেঁচে থাকা আর না থাকার কোনো মানে নেই। তখন শাকিরা অন্যদের সঙ্গে ইশারায় যোগাযোগের চেষ্টা করতেন। কিন্তু তাঁর কথা কেউ বুঝত না। তাই লিখে যোগাযোগ করতেন। তখন তাঁর বাচ্চারা এতটাই ছোট যে লেখাপড়া করতে পারত না। এখন তাঁর বড় ছেলের বয়স চার আর ছোট ছেলের দুই বছর।

৩টি গ্র্যামি, ১৩টি ল্যাটিন গ্র্যামিজয়ী এই শিল্পী তখন এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে বিছানা থেকেই উঠতে চাইতেন না। সারা দিন বিছানায় পড়ে থাকতেন। একসময় ডাক্তার জানান, অপারেশন করা দরকার। কিন্তু সেখানে ঝুঁকি ছিল। শাকিরা ভেবেছিলেন হয়তো অলৌকিক কিছু ঘটবে। অবশেষে দীর্ঘ চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। সুস্থ হয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে ‘এল ডোরাডো ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ করেছেন।

মা হওয়া কি তাঁর শিল্পসত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে? ৪২ বছর বয়সী শাকিরা বলেন, ‘সেটা হওয়া খুবই সম্ভব ছিল। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি, আমার মাতৃত্ব আর শিল্পীসত্তা, দুটোই আগলে রাখতে। আর চেষ্টা করি আমার বাচ্চাদের একটা স্বাভাবিক শৈশব দিতে।’

জীবন শাকিরার প্রায় কোনো চাওয়া অপূর্ণ রাখেনি। তবু শাকিরা চান, তাঁর একদিন একটা খামারবাড়ি থাকবে। সেখানে তিনি সন্তানদের নিয়ে সবজি চাষ করবেন, গরু পালন করবেন। আর? আর যা মন চায়, খাবেন।

শাকিরা ‘হিপস ডোন্ট লাই’, ‘ওয়াকা ওয়াকা’, ‘লোকা’ গেয়ে নেচেছেন। আর তাঁর সঙ্গে নেচেছে পুরো বিশ্ব। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রীত অ্যালবামের মালিকদের একজন। বিশ্বব্যাপী তাঁর অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি। কলম্বিয়ার শাকিরার মাতৃভাষা স্প্যানিশ হলেও অনর্গল ইংরেজি, পর্তুগিজ ও ইতালীয় ভাষায় কথা বলতে পারেন।শেষ পর্যন্ত আশার কথা তিনি আবার ফিরছেন গানের জগতে।

Leave a Reply

Translate »