আলু থেকে পলিথিন আবিষ্কার করলেন বাংলাদেশি যুবক

পরিবেশ দূষণ কমাতে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে এবার আলু থেকে পরিবেশবান্ধব পলিথিন তৈরি করলেন বাংলাদেশি এক যুবক। এই ব্যাগ দেশের আলু চাষি ও কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের জন্যও সুফল বয়ে আনবে। পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি ব্যাগগুলোর ওজন ধারণ ক্ষমতা ৫-৬ কেজি।

পরিবেশবান্ধব এই ব্যাগের উদ্ভাবক তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নবায়নযোগ্য শক্তি বিশেষজ্ঞ এবং বিকল্প জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা গবেষক দলের সদস্য মাহবুব সুমন।

তিনি বলেন, শীঘ্রই এই ব্যাগ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

জানা যায়, আলু থেকে তৈরি পলিথিনের ব্যাগগুলো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে প্রতিটি ব্যাগের বিক্রয় মূল্য হবে আনুমানিক ৩ টাকা। এছাড়া ব্যাগগুলো মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে মাটির সাথে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

ব্যাগ তৈরির পেছনের গল্প বলতে গিয়ে উদ্ভাবক মাহবুব সুমন বলেন, ২০১৮ সালের এপ্রিলে মুন্সিগঞ্জ জেলার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে সৌর বিদ্যুতের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সেখানে তাদের ব্যবসায়িক দুরবস্থা চোখে পড়ে।

তারা জানান, আলু চাষ ও কোল্ড স্টোরেজগুলো মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। তাই নতুন করে তারা বিনিয়োগ করতে পারবে না।

এমন পরিস্থিতিতে আলু থেকে বিকল্প কোনো প্রোডাক্ট উৎপাদন করে তাদের আর্থিক ক্ষতি কমানো যায় কিনা, তা নিয়ে ভাবতে থাকি। পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্যটি যদি পরিবেশবান্ধব করা যায়, তাহলে পরিবেশ দূষণও কমে যাবে। আর তা থেকে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগও রয়েছে, যোগ করেন তিনি।

মাহবুব সুমন বলেন, পরে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গবেষকদের সঙ্গে আলোচনা হয়। এরমধ্যেই ইয়ান শ্মিডট নামে এক জার্মান বন্ধু ‘পলকা’ বানানোর একটি প্রক্রিয়া শিখিয়ে দেন। বন্ধুটি ওই দেশের এনার্জি স্পেশালিস্ট। তার সাহায্য নিয়ে দেশীয় যন্ত্রপাতি ও কমনসেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে আলু থেকে পলিথিন (পলকা) উৎপাদন করি।

বাজারের সাধারণ পলিথিনের সঙ্গে পলকার পার্থক্য কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্লাস্টিকের মধ্যে হাইড্রোকার্বনের ছোট ছোট কণা বা মনোমার পরপর সজ্জিত হয়ে দীর্ঘ শেকলের পলিমার তৈরি করে। এমন অসংখ্য পলিমারের সংমিশ্রন হচ্ছে প্লাস্টিক। তাই পলিমারের তৈরি ব্যাগগুলোকে বলা হয় পলিথিন। এগুলো মাটিতে পচে না এবং অনেক দূষণের সৃষ্টি হয়।

ফলে এর বিকল্প তৈরি করা জরুরি। যদি এমন পলিমার তৈরি করা যায়, যা একইসঙ্গে দীর্ঘ শেকলের এবং দ্রুত মাটিতে পঁচে যাবে। তাহলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। পলকা হচ্ছে সেই পরিবেশবান্ধব পচনশীল পলিমার। তাছাড়া এর মধ্যে কোনো ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নেই

Leave a Reply

Translate »